দেশে প্লাস্টিক দূষণ ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে চলেছে। এতে একধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ক্যানসার, কিডনির জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা ধরনের ব্যাধির অন্যতম কারণ প্লাস্টিক। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) তথ্যমতে, প্রতিবছর সারা বিশ্বে ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। এ প্লাস্টিক-জাতীয় পণ্য কখনো পচে না, যার কারণে এর বর্জ্য পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা মাছ পশুপাখির মাধ্যমে খাদ্যচক্রে ঢুকে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। কমাচ্ছে জমির উর্বরতাও। পলিথিন ও প্লাস্টিক দুটোই পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সরকার ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করেছিল। কিছুদিন এর ব্যবহার সীমিত ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে সরকার সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। সরকারি পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ চালুর যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তা-ও ভেস্তে যায়। দৈনন্দিন প্রয়োজনে মানুষ প্লাস্টিক ব্যবহার করলেও এর পরিবেশগত ক্ষতি বা দূষণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, এ নিয়ে সারা বিশ্বেই কাজ হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে পরিবেশ রক্ষায় নানা পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশেও সভা-সেমিনারে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা নানা আশ্বাসবাণী শোনাচ্ছেন। কিন্তু দূষণ রোধে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। বুড়িগঙ্গাপাড়ের মাটি খুঁড়লেই পাওয়া যাচ্ছে প্লাস্টিক। মাটির অন্তত ৭ ফুট নিচেও মিলছে প্লাস্টিক। পাড়ের এসব প্লাস্টিক পরে গিয়ে জমা হয় নদীর তলদেশে।
সে ক্ষেত্রে নদী ও নদীপাড়ের মাটি দুটিই প্লাস্টিকের আক্রমণে বিপন্ন। এই বিপন্ন অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার উপায় বের করতে হবে। তাই বর্তমান বাস্তবতায় অন্তত সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও পরিবেশ আইন কার্যকর করার মাধ্যমে পরিবেশগত ক্ষতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তবে এর ব্যাপারে সরকারের কঠোর নীতিগত অবস্থানের কোনো বিকল্প নেই। কেননা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব পণ্য আমদানি, ব্যবহার বিষয়ে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে জৈব পচনশীল পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা ওপরিবেশদূষণ রোধে প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাত ও ব্যবহার রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কেননা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য হলেও এ দূষণ থেকে নিজেদের ও দেশকে রক্ষা করতে হবে।