একশ বছর আগে আমেরিকার সাহসী নারীরা তাঁদের ভোটদানের অধিকার আদায় এবং জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের ভিত্তি তৈরির মত সাধারণ একটি লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নেয়ার কারণে নিন্দা, প্রত্যাখ্যান ও কারাবরণের শিকার হয়েছিলেন। সংবিধানে সংশোধন এনে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে যেন প্রতিটি নারী ভোট দেওয়ার অধিকার পান সেই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাই এই দিনে নারীদের সন্মানে নারীর সমতা দিবসে হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু আজকের সময়ে বেশীরভাগ দেশেই দেখা যায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা সম অধিকার থেকে বঞ্চিত। সমাজে নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা দেয়া হয় না। নারী-পুরুষ সমঅধিকারের বিষয়টি এখনও অনেকাংশে কাগজে কলমে থেকে গেছে। সংবিধান অনুযায়ী নারী পুরুষ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকার পাবে। কিন্তু এই নিয়ম শুধু সংবিধানেই আটকে আছে। কর্মক্ষেত্রে নারীরা সবথেকে বৈষম্যর স্বীকার হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রপ্তানি যোগ্য পোশাক শিল্প অনেক বড়ো একটি ভূমিকা পালন করে। এই পোশাকশিল্পে প্রায় ২৫ লাখ নারী কাজ করে কিন্তু বেশীরভাগ গার্মেন্টসে দেখা যায় পুরুষের তুলনায় নারী কাজ বেশি করলেও অনেক ক্ষেত্রে নারী যথাযথ পারিশ্রমিক পায় না। বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে দেখা যায় নারী কর্মকর্তা থেকে পুরুষ কর্মকর্তা বেশি। নারীদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারী অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও বাংলাদেশে নারী ও মেয়ে শিশুর ওপর নির্যাতন, হত্যা এবং সহিংসতা বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনাগুলোর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। অপরাধীকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসাও বেশ দুরূহ হয়ে যাচ্ছে। আবার বিচারের মুখোমুখি হলেও বিভিন্ন ফাঁক গলে অপরাধী ছাড় পেয়ে যায়। ফলে অপরাধীদের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও স্পিকার নারী। এত কিছুর পরও নারী পুরুষের বৈষম্য একেবারে দূর হয়ে যায়নি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে শিক্ষা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে। নারীদের অধিকার আদায়ে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই সরকারকে নারীদের প্রাথমিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। নারী অধিকার সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। নারীর প্রতি বিদ্যমান সব ধরনের বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ড, রীতিনীতি, প্রথা ও চর্চা নিষিদ্ধকরণ এবং নারীর প্রতি বৈষম্য প্রদানকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশের অর্ধেক মানুষ নারী। অর্ধেক জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য টিকিয়ে রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব নয়। পাল্লার একপাশে ভারী করে কখনো সঠিক অনুপাত পাওয়া যায়না। তাই এই নারী সমতা দিবসে দেশের উন্নতির স্বার্থে ও নারীর প্রতি বৈষম্য, নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে কমাতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।