গ্রন্থ মানুষে মানুষে প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করে এবং শুভবুদ্ধি জাগরণের চাবিকাঠি। এছাড়াও গ্রন্থপাঠ মানুষের এক দুনির্বার নেশা। এই নেশাতেই মানুষ ছুটে যায় বইমেলায়। প্রতি বছরই অমর একুশে বইমেলার আয়োজন করেন বাংলা একাডেমি। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে চলবে অমর একুশে বইমেলা। এ বই মেলা প্রাঙ্গণে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশের বইপ্রেমী মানুষ সমবেত হয়। কেবল দেশ নয় বিদেশ থেকেও বিভিন্ন দেশের ডিপ্লোম্যাটিকরা বইমেলায় আসেন। এবারের বইমেলা শুরু হচ্ছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের পর নতুন সরকারের টানা চতুর্থবারের মতো অভিষেক হয়েছে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের নিশানার মধ্যদিয়ে কয়েক হাজার বই প্রকাশিত হয়েছে। সারাবছর যে পরিমাণ নতুন বই প্রকাশ হয় তার মধ্যে ৯০ ভাগ হয় এই বইমেলাকে টার্গেট করে। সারা বছর বই ছাপাতে চাইলেও বেশিরভাগ লেখক ফেব্রুয়ারিকে ডেডলাইন ধরে বইয়ের পা-ুলিপি দেন এবং অক্টোবর থেকে তাড়াহুড়ো করে বই সম্পাদনা ও ছাপা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একেকটি প্রকাশনী সংস্থা বইমেলায় প্রতিযোগিতামূলকভাবে বেশি বেশি সংখ্যক বই প্রকাশ করতে থাকে। বই প্রকাশ করার সব পরিকল্পনা সাজানো হয় এই মেলাকে সামনে রেখে। ফলে দেখা যায় সারা বছর নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে খুব কম। বাংলাদেশে বই ব্যবসা গত দশ-পনেরো বছর ধরে শুধুমাত্র মেলা কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। তবে সত্তর ও আশির দশকের চিত্র ছিল ভিন্ন সে সময়ে তিনি ও সমসায়মিক সময়কার লেখকরা প্রায় প্রতিমাসেই বই প্রকাশ করতেন। এভাবে বছরে ১০-১২টি বই লেখা হতো। সেই বইগুলো মেলার বাইরেও বছরের অন্যান্য সময় বাংলাবাজার নাহলে নিউমার্কেটের বইয়ের দোকানে বিক্রি হতো। সারা দেশ থেকে খুচরা বিক্রেতারা বাংলাবাজার থেকে বইগুলো পাইকারি দরে কিনে নিয়ে বিক্রি করতেন। মেলা উপলক্ষে বিশেষ কয়েকটি বই থাকতো। সেইসাথে সারা বছরে ছাপা বইগুলো জায়গা পেতো। কিন্তু এখন সেখানে আমূল পরিবর্তন। বর্তমানে বেশিরভাগ পাঠক ফেব্রুয়ারিতে কি বই এলো সেটাই খোঁজেন। জানুয়ারিতে প্রকাশিত বইটিকেও তারা বলেন পুরনো। কিনতে চান না। এটা একটা সংকট। বই হলো মানুষের জাগতিক, মনোস্তাত্মিক, নৈতিক, দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক উচ্চমার্গে উপনীত হওয়ার প্রধান সোপান। যে জাঁতি যত শিক্ষিত, সেই জাঁতি তত উন্নত। এবারের বইমেলায় দেখা যায় অন্যান্য বছরের তুলনায় বইয়ের দাম অনেক বেশি। এছাড়াও এসব এলাকায় ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন অলি গলিতে উৎপাত থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা সর্বস্ব লুটে নেয়। ফলে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে হবে। আর এর জন্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতে হবে। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে সাধারণ মানুষকেও অধিক সচেতন অবলম্বন করতে হবে।