খাদ্য উৎপাদন ও আমদানিতে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয়। চাল উৎপাদনে টানা পাঁচ বছর বিশ্বে তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে। এছাড়াও ২২টি খাদ্যপণ্য উৎপাদনের দিক থেকে শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে। কৃষকরা তাদের ফসলে বৈচিত্র্য আনায় বিভিন্ন খাদ্যের উৎপাদন বেড়েছে। দেশের জনসংখ্যার ভোগের সাথে সাথে খাদ্যের চাহিদাও বাড়ছে। এতে আমদানিনির্ভর পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। তবে খাদ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। গত ৫০ বছরে ধান উৎপাদন বেড়েছে ৩ কোটি ৯২ লাখ টনে, ভুট্টা ও গম উৎপাদনের পাশাপাশি মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টন। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। শাক-সবজি, মুরগি, মাংস ও ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এখন আমাদের প্রায় প্রতি বছর মোটা চালের উদ্বৃত্ত রয়েছে (অবশ্যই আমরা প্রতি বছর ৬০-৬৫ হাজার টন গম আমদানি করি)। দেশে এখনো দুগ্ধজাত পণ্যের ঘাটতি থাকলেও গরু ও মহিষের মাংস উৎপাদনে আমরা স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। বাংলাদেশে সাধারণত বড় কিছু গোষ্ঠী খাদ্যপণ্য আমদানি করছে এবং তারাই অনেক সময় সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা এত বেশি শক্তিশালী যে অনেক সময় সরকারও তাদের কথা শুনতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে তারাও অন্যতম বাধা। বাস্তবতা সরকার জানলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, ফলে তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে! এরপরেও আমাদের উর্বর ভূমিকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগালে প্রকৃত অর্থেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া কঠিন নয়। তবে কৃষিতে অবদান বাড়লেও কমেছে কর্মসংস্থান। গত দুই দশকে ২২ লাখ লোকের কর্মসংস্থান কমেছে কৃষি খাতে। তবে কৃষিকাজে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। দুই দশক আগে ২৯.৪০ শতাংশ নারী কৃষিকাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। এখন তা বেড়ে ৪৭.৯০ শতাংশ নারী অংশ নিচ্ছেন। এফএওর মতে, ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী দেশের শীর্ষ দশের মধ্যে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, চা এবং বিভিন্ন ফলমূলের মতো খাবার। গত এক দশকে, কুমড়া, ফুলকপি এবং অনুরূপ সবজির মতো কিছু পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় হয়ে উঠেছে। তাই ‘আমাদের পুষ্টিকর খাবারের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি এ ধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতেও হবে। কেননা, দেশে উৎপাদিত খাদ্যগুলো থেকে স্বল্পমূল্যে পুষ্টি পাওয়া সম্ভব। এজন্য আমদানিনির্ভর পুষ্টিকর খাবার থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশি সবজি ও মাছ খাওয়া বাড়াতে হবে।’ আমাদের উর্বর ভূমিকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। যেমন ভারত থেকে আমদানি ছাড়াই কোরবানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। তেমনি আলু ও পেঁয়াজের অপচয় রোধ করতে পারলে আমদানির প্রয়োজন হবে না।