আমাদের দেশে কর্মহীন বেকার জনসংখ্যা বেড়েছে। সন্তোষজনক চাকরি পাওয়া নিয়ে উচ্চ শিক্ষিত তরুণদে মধ্যে ক্রমেই হতাশা বাড়ছে। দেশে সরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। বেসরকারি খাত কাঙ্খিত মানে বাড়ছে না। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ছে না। গত ১০ বছরে দেশে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। কারণ, দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। ১০ বছর আগেও বছরে ২ থেকে আড়াই লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করে চাকরির বাজারে যুক্ত হতো। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে চার-পাঁচ লাখে উন্নীত হয়েছে। আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বেশির ভাগ শিক্ষিত চাকরি প্রার্থী শোভন কাজ করতে চান, কিন্তু শহরে সে পরিমাণ চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। দেশে বর্তমানে চাকরির সুযোগ বাড়ছে উৎপাদশীল ও কৃষিখাতে। এ দুটি খাতে আবার স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস তরুণদের কাজের সুযোগ কম। এ দু’টি খাতে দক্ষ লোকের চাহিদা বেশি। শিক্ষিত যুবক যারা চাকরির বাজারে রয়েছে, তারা এসব কাজে নিজেদের যুক্ত করতে চায় না। এতেও শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সরকারি খাতের চাকরির বেতন বাড়ছে বলে তরুণেরা হন্যে হয়ে সরকারি চাকরির পিছনে ছুটছে। সরকারি চাকরির বেতন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং সামাজিক প্রতিপত্তি ও মর্যাদার বিষয় থাকলেও আরেকটি কারণ আছে, যার দিকে আমরা নজর দিচ্ছি না। সেটা হলো, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কাঙ্খিত হারে না বাড়া। ফলে দিনের পর দিন গেলেও অনেক উচ্চ শিক্ষিত বেকার থেকে যায়। দেশে গত বছরের শেষ তিন মাসে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে ৪০ হাজার। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ২৩ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ১৫ লাখ ৭০ হাজার আর নারী বেকারের সংখ্যা ৭ লাখ ৮০ হাজার। ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ১০ হাজার। এক বছরের ব্যবধানে সেই সংখ্যা ৪০ হাজার বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় স্ব-কর্মসংস্থানে সুযোগ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই। ‘তরুণ ও শিক্ষিত যুবকেরা যাতে নিজেরা নিজেদের কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরি করতে পারেন, সে জন্য তাঁদের সহজে ব্যাংকঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের অর্থায়ন ব্যবস্থায় এ উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে আশানুরূপ বিনিয়োগের খুব বেশি সম্ভাবনা নেই। তাই ঋণসুবিধা বাড়িয়ে তরুণদের স্ব-কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ নিতে হবে।’