বাংলাদেশের আবহাওয়া এখন বড়ই স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে। একদিকে বঙ্গপো সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের আশংকা, অন্যদিকে দেশ জুড়ে আবারও তাপ প্রবাহ। মাঝে মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী বৃষ্টিও চলছে। এরমধ্যে এখন দেশের বেশির ভাগ এলাকায় মানুষ জীবন অতিষ্ঠ করা গরমে কষ্ট পাঁচ্ছে। এরমধ্যে সারা দেশে চলছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। সারাদেশে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু গত ৭ ও ৮ মে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ ঘাটতি হচ্ছে। কাজেই তীব্র গরমে মানুষের যে বীভৎস রকমের কষ্ট হচ্ছে, তা না বললেও খুব সহজেই অনুমেয়।
শুরু হওয়া তাপপ্রবাহ গত ৮ মে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চারটি জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গত ৮ মে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত ৩৪ বছরের মে মাসের রেকর্ড ছুঁয়েছে। আর সারা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ন’বছরের রেকর্ড ছুঁয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী দু’ তিন দিনে সারা দেশে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। কোনো এলাকার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে এবং তা যদি ছ’ ঘণ্টা স্থায়ী হয় তবে এমন অবস্থাকে অতি উষ্ণ তাপমাত্রা বলা হয়। আর অতি উচ্চ তাপমাত্রায় কিডনি, ফুসফুস ও যকৃতের মতো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। এমনকি হিটস্টোকে মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিক এবং শহরের দিন মজুরেরা এ ধরনের তাপ প্রবাহের কারণে সবচে ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাদের জন্য সঠিক পূর্বাভাস ও এ ধরনের পরিস্থিতিতে করনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু এমন কোনো উদ্যোগ দেখ যাচ্ছে না। বৃক্ষ নিধনের কারণে আজ প্রকৃতি রুষ্ট হয়ে তাপমাত্রা বাড়িয়ে জনজীবনে কষ্ট দিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে। খোদ সিটি করপোরেশন রাতের আঁধারে রোর্ড ডিভাইজারে লাগানো জীবন্ত গাছ নিধনের খেলায় মেতেছে। অন্যদিকে হিট অফিসার নিয়োগ করে তাপদাহ থেকে নাগরিকদের বাঁচাবার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গাছ লাগানো বা পিপাসিত মানুষের পিপাসা নিবারণের জন্য বিভিন্ন স্থানে পানির কল স্থাপন করা হচ্ছে না। আবহাওয়াবিদরা নগরীর প্রতিটি এলাকায় একটি করে বৃক্ষ আচ্ছাদিত পার্ক তৈরি ও জলভূমি সংরক্ষণ করার সুপারিশ করলেও তা করা হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় তাপদাহের গরমে মানুষ কষ্ট পাঁচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগ ব্যাধিতে। এজন্য জনসচেতনতার জন্য কোনো কর্মসূচি নেই, নেই পরিবেশ ভারসাম্যের জন্য যথাযথ কোনো পরিকল্পনা। সাধারণ মানুষ কি করবে, কোথায় জানাবে তাদের আকুতি? কাজেই পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এখনই উদ্যোগী হওয়া। না হলে গরমে প্রাণ নাশ হলে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সারা জীবনের কান্না থামানো সম্ভব হবে না।