দেশো ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো উচ্চ খেলাপি ঋণ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তাদের অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে এ সমস্যাও শনাক্ত করে পৃথকভাবে তুলে ধরেছে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিপত্রে (এপিএন)। এতে আরও বলা হয়েছে, টাকা পরিশোধে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না খেলাপিরা। মূলত এ কারণেই অর্থ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। উল্লেখ্য, ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো প্রতি অর্থবছরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএন) স্বাক্ষর করে থাকে। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের জন্য ইতোমধ্যেই চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। ব্যাংকগুলো এ অর্থবছরে মোট খেলাপি ঋণ থেকে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা আদায়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বস্তুত খেলাপি ঋণ আদায় করা ব্যাংকগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবলোপন করা ঋণ থেকে আদায় হচ্ছে কম। এ ছাড়া মামলাজনিত কারণেও ঋণের অর্থ আদায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কেন ও কী কারণে ঋণখেলাপি হয়েছে এবং তা অবলোপন করা হয়েছে এবং এর পেছনে কারও সম্পৃক্ততা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। ঋণ পরিশোধ না করলে খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত অবশ্যই। তবে এ ক্ষেত্রে একটি জটিলতা তৈরি হচ্ছে। দেখা গেছে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে তারা উচ্চ আদালতে গিয়ে রিট করে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। এ সমস্যার একটি সমাধানে আসতে হবে। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকসংশ্লিষ্টদের সম্মিলিতভাবে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে সমস্যাগুলো কীভাবে দূর করা যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংকিং খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করছে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপির প্রভাব পড়ছে ঋণ ব্যবস্থাপনায়। এ কারণে এগোতে পারছেন না ভালো উদ্যোক্তারা। ফলে বাড়ছে না বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। কাজেই খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিগত সময়ে দেখা গেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ অবলোপন ইত্যাদির মাধ্যমে ঋণখেলাপির দায় থেকে মুক্ত থেকেছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি, বরং তা ঋণ আদায় প্রক্রিয়াকে আরও প্রলম্বিত করেছে। তাই খেলাপি ঋণসহ ব্যাংক খাতের সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সমাধানটি এমন হওয়া উচিত যাতে ঋণখেলাপিরা যত বড় প্রভাবশালীই হোন, তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত হবে। আমাদের মনে আছে, দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা, এ টাকা নিলে ফেরত দিতে হবে। দেশের জনগণের টাকা বেহাত হোক বা ফেরত না আসুক, এটি চাইতে পারি না। সরকারি বা বেসরকারি যে ব্যাংক থেকেই ঋণ নেওয়া হোক না কেন, ঋণের অর্থ ফেরত দিতে হবে। আমরা খেলাপি ঋণের বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর এ দৃঢ় অবস্থানের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।