দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। অথচ জাতীয় নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা যেন ততই কমছে। ভোট বন্ধে ইসির ক্ষমতা কমিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল গত সপ্তাহে পাশ হয়েছে। আরপিও’র সংশোধনী অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণার পর কোনো আসনের পুরো ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসবে, শুধু সেসব (এক বা একাধিক) ভোটকেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর তদন্তসাপেক্ষে ফলাফল বাতিল করে ইসি ওইসব কেন্দ্রে নতুন নির্বাচন দিতে পারবে। আগের আরপিও অনুযায়ী, অনিয়ম বা বিরাজমান বিভিন্ন অপকর্মের কারণে নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে তারা আইনানুগ নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না, সেক্ষেত্রে নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে তাদের ভোট বন্ধের এখতিয়ার ছিল। উল্লেখ্য, সংবিধান অনুযায়ী আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এর আগে আরপিওতে এমন সংশোধন আনা হলো। বিরোধী দলের অভিযোগ, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সংশোধনীর মাধ্যমে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী অবশ্য বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। এদিকে সাংবাদিকদের অবাধ দায়িত্ব পালন নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল, সে বিষয়ে সংশোধিত আরপিওতে বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকদের কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ ধরনের অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিষয়টি প্রশংসনীয় হলেও ভোটের মাঠে কার্যকর হবে কিনা তা নির্বাচনের দিনই বোঝা যাবে। তবে ভোট বাতিলে ইসির ক্ষমতা এবং ভোট বন্ধে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ক্ষমতা বাড়ানো উচিত বলে আমরা মনে করি। প্রার্থীর এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখালে বা কেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে শাস্তির সুস্পষ্ট বিধানও রাখা বাঞ্ছনীয়। এসব পদক্ষেপের ফলে নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপর ইসির কর্তৃত্ব যেমন বাড়বে, তেমনি তা নির্বাচনের অনিয়ম রোধেও ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। বিশেষ করে যারা ভোটকেন্দ্রে ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে, তাদের জন্য এটি সতর্কবার্তা হিসাবে কাজ করবে।